নেটফ্লিক্সে মাত্রই থ্রিলার একটা মুভি দেখে শেষ করলেন। মুভি শেষে নেটফ্লিক্সের হোমপেজে এসে দেখবেন আপনি একটা থ্রিলার মুভি দেখার কারণে থ্রিলার ঘরানার আরও বেশ কিছু মুভি সাজেস্ট করছে আপনাকে নেটফ্লিক্স। বা ধরুন একটু আগে আপনার বন্ধুর সাথে বাইক নিয়ে আলোচনা করছিলেন, পরমুহূর্তেই ফেইসবুকে, ইন্সটাগ্রামে ঢুকে দেখতে পেলেন বাইকের এ্যাডভার্টাইস। কিভাবে হয় এমন? সিম্পল! এ আইয়ের মাধ্যমে। ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি ৩.৫ রিলিজ করে সারা বিশ্বে অবিশ্বাস্য সাড়া ফেলে দেয় ওপেন এ আই। মানুষ দেখে কিভাবে একটা সাধারণ চ্যাটবক্সে যে কোন প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তেই অসাধারণ ভাবে দিয়ে দিচ্ছে। অথচ আমাদের মাঝে বহু আগ থেকেই ছিল এ আই৷ পার্থক্য শুধু এর পিলে চমকানো অগ্রগতিতে। সেদিন আর খুব বেশিদূর নয় যেদিন এ আই শুধু আর প্রশ্ন উত্তরে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান হবে। পৃথিবীতে রাজত্ব করবে। আজ আমরা জানব বুদ্ধিমান এআই এর ফলে কোন কোন চাকরি পড়বে হুমকির মুখে আর কোন চাকরি চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে কেটে পড়তে পারবে।
যেসব চাকুরিতে পড়বে এ আই এর থাবা
ধরুন আপনি চাচ্ছেন একটা ছবি বানাতে বা কোনো পোস্টার। এ আই প্রম্পটে শুধু ছবিটার বর্ণনা দিবেন। ব্যাম! চলে আসবে আপনার কাংখিত ছবি। এ আই এর এই স্কিল এখন সবার জানা। ক্রিয়েটিভ ছবি থেকে শুরু করে ভিডিও, পোস্টার এমনকি ভয়েসও দিতে পারে এ আই। যদিও একদম পারফেক্ট হয় বলব না। তবুও আগের মত ব্যাসিক কাজের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার এর প্রয়োজন এখন আর পরে না। কিছু এপ আর ওয়েবসাইটের এ আই টুল দিয়ে নিজেই লোগো, পোস্টার, ব্যানার বানিয়ে ফেলা যায়।
শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইনই নয়, ভয়েস ওভার আর কন্টেন্ট রাইটারের ক্রিয়েটিভ মার্কেটেরও অনেকটুক জায়গা দখল করে ফেলেছে এ আই। তা প্রোগ্রামিং আর বাদ যাবে কেন? টুকটাক ব্যাসিক প্রোগ্রামিংও করতে পারে এ আই। কোনো রোগে কাতরাচ্ছেন? প্রাথমিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে পাড়ার নতুন ডাক্তার এ আই সাহেব। আর ছোট খাটো চাকরিগুলো তো খেয়ে নিচ্ছেই এ আই। ক্যাশিয়ার, প্রশাসনিক সহকারী, টিকেট ক্লার্ক, কেরানী চাকরি গুলো এখন এ আই এর দখলে প্রায়৷ ইকোনমিক ওয়ার্ল্ড ফোরাম( ডাব্লিউ এফ) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৯২ মিলিয়ন চাকরি হারানোর সম্ভাবনা আছে৷ তবে এ আই এর ফলে বাড়বে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও। ১৭০ মিলিয়ন নতুন চাকরি তৈরি হবে। অর্থাৎ ৭৮ মিলিয়ন চাকরি বাড়বে।
যেসব চাকুরি বেঁচে যাবে এ আই এর কবল থেকে
তাহলে বোঝেন আর কোনো জায়গায় নাক গলাতে বাকি রাখে নি এ আই৷ তবে কি ভবিষ্যতে সব সেক্টর দখল করে ফেলবে এ আই? মানুষ কি তবে বেকার হয়ে যাবে? তার আগে একটু চিন্তা করে বলুন তো আপনি কি কখনো মারাত্মক অসুস্থ হলে মানুষ ডাক্তারকে দেখাবেন নাকি রোবোট ডাক্তার? কি ভাবছেন? রোবোট ডাক্তারের উপর ভরসা করা যাচ্ছে না তাই না? কোনো ভাইরাসকে ইলিমিনেট করতে গিয়ে আবার না আপনাকেই ইলিমিনেট করে দেয়। তা হতেও পারে কিন্তু। মানুষের মত বুদ্ধিমত্তা হলেও এ আই বলুন কিংবা এজি আই, মানুষ কখনোই চিকিৎসার জন্য পুরোপুরি যন্ত্রের উপর নির্ভর করবে না৷ কারণ আপনি তার কাছেই ট্রিটমেন্ট নিতে চাইবেন যাকে আপনি ভরসা করতে পারেন৷ একজন মানুষ অন্য মানুষকেই কেবল ভরসা করতে পারে, রোবটকে নয়। তাই ডাক্তার, নার্সের চাকুরি আপতত বেচে যাচ্ছে এ আই এর থাবা থেকে।
ইমোশনাল ইন্টালিজেন্স বা সোশ্যাল ইন্টালিজেন্স নির্ভর চাকরিগুলো এ আই দখল করতে পারবে না। যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন যন্ত্রের মধ্যে নেই মানুষের মত অনুভূতি। এই অনুভূতিই একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের মনের যোগাযোগ তৈরি করে। যেমন শিক্ষক শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের পড়ায় না। তাদের সাথে মানসিক যোগাযোগ তৈরি করে, তাদের আচার আচরণ, চলার পথ সঠিক করার শিক্ষা দেয়। বা ডিপ্রেসড কোনো মানুষ যখন থেরাপিস্টের কাছে যায় তখন থেরাপিস্ট মানবিক আচরণের মাধ্যমে রোগীর মনের পরিবর্তন ঘটাতে চেষ্টা করে। যন্ত্রের কাছে যা আশা করা বোকামি।
ট্রাস্ট ইস্যু আছে এমন কোনো কাজেই কিন্তু এ আই থেকে মানুষের প্রয়োজন বেশি৷ সম্প্রতি টেসলা এমন গাড়ি নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা চলবে ড্রাইভার ছাড়াই। হয়তো এটা চলে আসবে ২০২৬ সালের মধ্যেই। এই গাড়ির এক টেস্ট ড্রাইভিং এ দেখা গেল গাড়িটি পথচারীকে বাচাতে গিয়ে পাশের গাড়ির সাথে একসিডেন্ট করে ফেলেছে। এ আই আরও উন্নত হলেও ড্রাইভিং এর মত জটিল অবস্থায় মানুষের মত চিন্তা করা এ আই এর জন্য সহজে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের রাস্তা হলে তো আর কথাই নেই৷ যেখানে সাই করে রাস্তার রং সাইডে অহরহ গাড়ি বা রিকশা ঢুকে পড়ে৷ বা মানুষ গাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়ে দৌড়ে পার হয়। কিংবা পাবলিক বাস গুলো হুট করে বলা কওয়া ছাড়াই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে মানুষ নামিয়ে দেয়৷ এসব জটিল অবস্থায় একসিডেন্ট এড়াতে পারে কেবল মানুষ। এত্ত নিয়ম শৃঙ্খলা বিহীন অদ্ভুত অবস্থায় এ আই এর মত বুদ্ধিমান যন্ত্রও অসহায়। তাই গাড়ির ড্রাইভার বলুন বা প্লেনের পাইলট মানুষকে এক্ষেত্রে রিপ্লেস করা সহজ হবে না মোটেও।
এ আই দিয়ে ভয়েস ওভার করার ব্যাপারটা সবার জানা। আজকাল প্রীতম হাসানের গানও অরিজিৎ কিংবা আতিফ আসলামের কন্ঠে গাওয়ানো সম্ভব। কন্ঠ ক্লোন করা এখন বাম হাতের খেলা। তবে কোনো মৌলিক গান মানুষের মত আবগ দিয়ে নিজের ইউনিক কন্ঠে গাওয়া কোনো যন্ত্রের সাধ্যের কাজ নয়৷ যদিও এ আই যেভাবে আগাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত গায়ক এ আইকেও দেখতে পাব আমরা৷ তবে সে সম্ভাবনা এখনও অনেক দূরে।
সবচেয়ে বেশি বাড়বে মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা সাইন্টিস্ট, এ আই রিসার্চ সাইন্টিস্টের সংখ্যা। কারণ যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন এ আই নিয়ন্ত্রণে, উন্নতিতে ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন তো মানুষকেই!