পৃথিবীর নতুন সঙ্গী ‘দ্বিতীয় চাঁদ’ বা ‘মিনি মুন’

পৃথিবীর বিশস্ত সঙ্গী হয়ে ৪ বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে এর পাশে ঘুরছে উপগ্রহ চাঁদ। এইবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার জন্য আরেকটি ছোট্ট চাঁদ যুক্ত হচ্ছে এ দলে।  কি এই মিনি মুন? কেনই বা এটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে? 

পৃথিবীর বিশস্ত সঙ্গী চাঁদ; Image Source: Pixabay

মিনি মুন

মাত্র ১০ মিটার ব্যাসের এই মিনি মুন আসলে কোনো কোনো চাঁদ নয় বরং একটি গ্রহাণু। পৃথিবীর চারপাশে মাত্র দুই মাসের জন্য ঘুরছে। জ্যোতির্বিদরা এর নামকরণ করেছে ‘ ২০২৪ পিটি৫’। এটি পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সেপ্টেম্বর ২৯ থেকে নভেম্বর ২৫ পর্যন্ত দুই মাসের জন্য ঘুরছে এবং দুই মাস পর আবার মহাকাশে হারিয়ে যাবে। এ গ্রহাণু আকারে এতটাই ছোট এবং এত দ্রুত গতিসম্পন্ন যে একে লক্ষ্য করা খুবই কঠিন।

অতীতে মিনি মুন

পূর্বেও পৃথিবীর আরও মিনি মুন ছিল। সাধারণত প্রতি ১০-২০ বছরে একবার এ ধরণের গ্রহাণু পৃথিবীর অক্ষপথে প্রবেশ করে।  সর্বশেষ মিনি মুন ছিল ‘২০২০ সিডি৩’। একটা গাড়ির সমান আকৃতির এই ‘২০২০ সিডি৩’ ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছিল। মিনি মুনের কক্ষপথ স্থির নয়, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এ গ্রহাণু গুলোকে সামনে পেছনে টানতে থাকে ফলে এটি ‘ হর্সশু’ আকৃতির কক্ষপথে চলতে থাকে৷ ‘২০২০ সিডিও’ এবং ‘২০২৪ পিটি৫’ দুইটির আকৃতি সমান হলেও ‘২০২৪ পিটি৫’ ঘোড়ার খুরাকৃতির কিছুটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরবে যা বিজ্ঞানীদের জন্য মহাকাশ গবেষণায় অনেক সুবিধাজনক হবে৷ মিনি মুন সাধারণত কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পৃথিবীর অক্ষপথে থাকে এবং একটা সময়ে মধ্যাকর্ষন শক্তি ছাড়িয়ে আবার মহাকাশে হারিয়ে যায়। সিলিকন, কার্বন, মাটি ও সাধারণ ধাতব পদার্থের মিশ্রণে গঠিত এসব গ্রহাণু। 

সর্ব প্রথম মিনি মুন

২০০৬ সালে সর্ব প্রথম ‘২০০৬ আরএইচ১২০’ পৃথিবী থেকে চিহ্নিত করা হয়।  এর ব্যাস ছিল ২-৪ মিটার। প্রায় ১ বছর ধরে এটি কক্ষপথে ছিল। সাউদার্ন আফ্রিকান লার্জ টেলিস্কোপ দ্বারা এর ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ট্যাক্সনে অবস্থিত ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে নামক টেলিস্কোপ দ্বারা এ গ্রহাণুকে খুজে পাওয়া যায়।  

সর্বশেষ মিনি মুন

সর্বশেষ মিনি মুন ‘২০২৪ পিটি৫’ গ্রহাণু নামে পরিচিত। এটি প্রথম ৭ অগাস্ট নাসার অনুদানপ্রাপ্ত এটলাস (ATLAS) সিস্টেম দ্বারা হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষণ আকাশ  স্ক্যান করা হয় যেন পৃথিবীর কাছে কোনো বস্তু আসলেই তা আগ থেকে জেনে পৃথিবীকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো সম্ভব হয় বা মহাকাশ ও বস্তুটি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানো সম্ভব হয়। 

মিনি মুন কি দেখা যায়?   

মিনি মুনের আকৃতি এতই ক্ষুদ্র যে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে খালি চোখে তা দেখা অসম্ভব। এটি দেখতে কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি ডায়ামিটারের, উচ্চ সংবেদনশীল ডিটেক্টর যুক্ত টেলিস্কোপ প্রয়োজন, যা কেবলমাত্র প্রফেশনালদের কাছেই থাকে।

কত ধরনের চাঁদ আছে? 

স্থায়ী চাঁদ ছাড়াও পৃথিবীর কক্ষপথে আরও চাঁদ রয়েছে। 

ঘোস্ট মুন: ধুলিকণার মিশ্রণে তৈরি এ ঘোস্ট মুনের নামকরণ করা হয়েছে কর্ডাইলেভেস্কি ক্লাউড। পৃথিবী ও চাঁদ এর মধ্যবর্তী ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টগুলোতে এটিকে পাওয়া যায়। পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যাকর্ষন শক্তি যেখানে একসাথে কাজ করে সে পয়েন্টগুলোকে ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট বলে। এ পয়েন্টগুলো মধ্যাকর্ষন শক্তির সুইট পয়েন্ট, যেখানে ঘোস্ট মুন স্থিতিশীল ভাবে থাকতে পারে। পোলিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোর্ডাইলেভস্কি প্রথম ১৯৬০ সালে ঘোস্ট মুন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনোমিকাল সোসাইটি ২০১৮ সালে এগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিত করে। ঘোস্ট মুন আকারে ১ লাখ কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে।

কোয়াসি মুন: কোয়াসি মুন অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু যেমন গ্রহ, চাঁদ, গ্রহাণু ইত্যাদিকে আবর্তন করে ঘুরতে পারে। শুধুমাত্র পৃথিবী নয়,  ভেনাস, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুন, প্লুটোরও কোয়াসি মুন আছে। এগুলো এক সময় তাদের কক্ষপথ পরিবর্তন করে বেরিয়ে যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রায়ান এ স্কিফ ২০০২ সালে অ্যারিজোনায় প্রথম কোয়াসি মুন ‘জুজুভে’ আবিষ্কার করেন। প্রায় ২৩৬ মিটার ব্যাসের অর্থাৎ প্রায় ৭৭৫ ফুটের ছিল কোয়াসি মুনটি। 

কোয়াসি মুন পৃথিবীর চারপাশে সূর্যের কক্ষপথে আবর্তিত হয়। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘোরে না। পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে সূর্যের চারপাশে ঘুরলেও এর কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে পুরোপুরি মিলে যায় না। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top