ক্লান্ত শরীরে অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় মনে হয় যাই ক্যাফেতে বসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি খেয়ে সারাদিনের ক্লান্তি কফির ধোঁয়ার সাথে উড়িয়ে দি বা দোকান থেকে এক বোতল কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে কলিজাটা ঠান্ডা করে নি। অথবা কোনদিন বাইরে খাওয়ার মুড হলে রেস্তোরাঁর বসে ভরপুর ফ্রেঞ্চফ্রাই, বার্গার, পিৎজা খাওয়া তো এখন মানুষের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ফাস্ট ফুডে পরিপূর্ণ ফাস্ট এ দুনিয়ায় মিলেনিয়াল, জেন জি, জেন আলফা সব জেনারেশনই আধুনিক সব খাবারে মত্ত। কিন্তু লোভনীয় এ খাবারের নামে আমরা শরীরে বিষ ঢুকাচ্ছি না তো? সাময়িক আনন্দ দায়ক খাওয়া গুলোই কি আমাদের পরবর্তীতে কঠিন অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
আল্ট্রা প্রসেসড খাবার
খাবারকে ঘিরে চলে মানুষের জীবন চক্র। বর্তমানে বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতির ফলে ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে অত্যাধুনিক সব বৈচিত্র্য। আরো কিভাবে খাবারের যোগান, স্বাদ বাড়ানো যায় তা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলে এক্সপেরিমেন্ট। বর্তমানে মানুষের কর্মব্যস্ততা এতই বেড়েছে যে খাবার বানানোর পেছনে সময় নস্ট করার মত সময় কারো নেই। তাই ফুড ইন্ডাস্ট্রি গুলোও মানুষের এ সমস্যার সমাধানে এনেছে স্বল্প সময়ে বানানোর জন্য রেডিমেড প্যাকেটজাত খাবার। মোটামুটি সব খাবারই এখন প্যাকেটে পাওয়া যাচ্ছে। এ সকল আল্ট্রা প্রসেসড খাবার শুধু সময়ই বাচায় না, সাধারণ খাবার থেকেও বেশি সুস্বাদু ও হয়। এই খাবার গুলো এতটাই লোভনীয় হয় যে বাসায় খাবার থাকলেও প্রতিদিনই আমাদের খাবার মেনুতে বাইরের আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের কিছু না কিছু থাকবেই। আর এই আল্ট্রা প্রসেসড খাবারগুলোর দামটাও হাতের একদম আমাদেরহাতের নাগালে তাই ধনী গরিব সর্বসাধারণের কাছে এসব খাবার সহজলভ্য।
আল্ট্রা প্রসেসড খাবার কারখানায় এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি সর্বোচ্চ সুস্বাদু, রেডিমেড বা ইন্সটেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয়, এর শেল্ফ লাইফ দীর্ঘ হয় এবং সস্তা বা সহজলভ্য হয়। এ সকল শর্ত পূরণের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় যা খাবারকে সুস্বাদু করলেও আমাদের জন্য করে তোলে বিষাক্ত।
খাবার গুলো প্রক্রিয়াজাত করার প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক প্রায় কোনো গুনাগুনই আর অবশিষ্ট থাকে না। প্রাকৃতিক কোনো উপাদান ব্যবহার না করে শুধুমাত্র কেমিক্যালের মাধ্যমে নির্যাস দিয়ে তৈরিকৃত এসব খাবারে প্রচুর পরিমানে চিনি, লবণ, ফ্যাট ও আড্যাটিভ থাকে। যা ব্রেইনকে ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত এ চিনি শরীরের ইনসুলিন রেসিস্টেন্স তৈরি করে। ফলে হ্রদরোগ, হাই প্রেসার, স্ট্রোক, পিসিওএস সহ অনেক ধরনের অসুস্থতা বাড়ায়।
আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষক ও বিজ্ঞানীরা মিলে নোভা নামক একটি শ্রেণীবিন্যাস তৈরি করেছে যার দ্বারা খাবারকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।
১. প্রাকৃতিক বা হালকা প্রসেসড খাবার
২. প্রসেসড খাবার রান্না সামগ্রী
৩. প্রসেসড খাবার
৪. আল্ট্রা প্রসেসড খাবার
১. প্রাকৃতিক বা হালকা প্রসেসড খাবার : প্রকৃতিতে সরাসরি যে খাবার পাওয়া যায় যেমন, সবজি, ডাল, ফল, বাদাম, বীজ, মাংস, ডিম, দুধ, মাশরুম ইত্যাদি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
২. প্রসেসড খাবার রান্নার সামগ্রী: প্রাকৃতিক খাবারকে আরো উপযুক্ত খাবারে পরিণত করার জন্য এসব সামগ্রী মিশিয়ে সামান্য পরিবর্তন করা হয়।
যেমন: তেল, মশলা ইত্যাদি।
৩. প্রসেসড খাবার : প্রাকৃতিক বা আংশিক প্রসেসড খাবারের সাথে যখন তেল, চিনি, লবণ ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে নতুন খাবার তৈরি করা হয় তাকে প্রসেসড খাবার বলে। যেমন: রান্না করা সবজি টিনের ক্যানে সিল করা থাকে, রোস্টেড কফি বিন, ফ্রোজেন খাবার। টিনজাত বা প্যাকেট খাবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে ভালো রাখার জন্য আবার বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। তবে প্রসেসড খাবারে কিছুটা হলেও প্রাকৃতিক উপাদান থাকে বলে এটি শরীরের জন্য পুরোপুরি ক্ষতিকর নয়। কিছু প্রসেসড খাবারে আলাদা করে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল যুক্ত করা হয় এর গুনগত মান বাড়ানোর জন্য এক্ষেত্রে এমন প্রসেসড খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও হয়। দেখলেন তো সব প্যাকেটজাত খাবারই যে খারাপ তা কিন্তু নয়।
৪. আল্ট্রা প্রসেসড খাবার : আল্ট্রা প্রসেসড খাবারে প্রাকৃতিক উপাদান যৎসামান্য বা থাকেই না বললেই চলে। এ সকল খাবার ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরিকৃত বিভিন্ন উপাদান ও কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি হয়ে, অনেকগুলো প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায় এবং খুবই সুস্বাদু খাবারে পরিণত হয়। মূলত যে সব উপাদান আমরা সচরাচর আমাদের রান্নাঘরে বা দোকানে পাই না, শুধুমাত্র কারখানায় ব্যবহৃত হয়, এমন উপাদানে তৈরি যে কোন খাবারই আল্ট্রা প্রসেসড খাবার। এতে বিশাল পরিমাণে ক্যালরি থাকে কিন্তু খাদ্যের কোনো গুনাগুন খুবই কম বা থাকে না বললেই চলে। ফলে কোন নিউট্রিয়েন্টসই পাওয়া যায় না এসব খাবার থেকে।
আল্ট্রা প্রসেসড খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ কেন?
আমাদের ফাস্ট কালচারের এ দুনিয়ার নতুন উদ্ভাবন এই আল্ট্রা প্রসেসড খাবার। যা আমাদের খাবার বানানোর প্রক্রিয়াকে আরো সহজ, দ্রুত, সুস্বাদু ও দীর্ঘ মেয়াদী ভালো রাখার উপায় বের করেছে। যে খাবার প্রকৃতিতে ৩/৪ দিনেই নষ্ট হয়ে যেত সে খাবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এখন বছরের পর বছর ভালো থাকে। যে খাবার তৈরি করতে ২/৩ ঘন্টা সময় লাগত সে খাবার এখন ৫/১০ মিনিটেই তৈরি করা যায়। কিন্তু সময় বাচাতে গিয়ে আমরা জীবন বাচানোয় কতটুকু পিছিয়ে পড়ছি তা কেউ দেখছে না। বর্তমানে স্থুলতার সমস্যা দিনকে দিন ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে। আল্ট্রা প্রসেসড খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান না দিয়ে শুধুমাত্র চর্বি সঞ্চয় করে শরীর স্থুলকায় বানাচ্ছে। মানুষ আয়েশ করে শুয়ে বসে সহজে খাবার হাতে পেয়ে যাচ্ছে সস্তায়। ফলে স্থুলতার সমস্যা এখন আর কোনো এক ধাপে সীমাবদ্ধ নেই, সব বয়স সব শ্রেণীর মানুষে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থুল মানুষ সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হ্রদরোগ, ক্যান্সার, ফ্যাটি লিভার, অকাল মৃত্যু ইত্যাদি ভয়ংকর রোগ এখন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে শুধুমাত্র আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে।
মানব মস্তিষ্কে আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের প্রভাব কি?
⚫আল্ট্রা প্রসেসড খাবারে উচ্চ পরিমাণে চিনি, লবণ ও চর্বি থাকে এবং ফাইবারের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। ফাইবার সাধারণত উদ্ভিদজাত খাবারে পাওয়া যায় যেমন শাক, সবজি, ফল, বাদাম, বীজ। ফাইবার আমাদের অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে পুষ্টির যোগান দিয়ে বাচিয়ে রাখে। পরিপাক ক্রিয়ার সময় ফাইবার ভেংগে শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন হয়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিপ্রেশন ও অন্যান্য মানসিক রোগ থেকে এটি বিরত রাখে।
⚫আল্ট্রা প্রসেসড খাবারে থাকা অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও কেমিক্যাল গুলো অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। এই অতিরিক্ত প্রদাহ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি করে৷ খেয়াল করলে দেখা যায় স্ট্রেসে বা হতাশায় মানুষ প্রচুর বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোক অনুভব করে। মনে হয় অন্তত এই কঠিন পরিস্থিতিতে একটু সুস্বাদু খাওয়া তো আমি প্রাপ্য। স্ট্রেস থেকে তৈরি হওয়া প্রদাহ তখন আমাদের বাইরের লোভনীয় খাবারের প্রতি আকর্ষিত করে।
⚫আমরা যখন মিস্টি স্বাদযুক্ত খাবার মুখে নেই তখন জিহ্বার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশ সেরেব্রাল কর্টেক্সে এ তথ্য পৌঁছে যায়। মস্তিষ্কের এ অংশে বিভিন্ন স্বাদের সিগনাল গ্রহণ করা হয়। এ সিগনাল মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে চালু করে দেয়। এ রিওয়ার্ড সিস্টেম মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে কানেক্টেড একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় মিস্টি স্বাদ গ্রহণের পর মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম চালু হয়ে যায় এবং বারবার স্বাদ নেওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়। এ রিওয়ার্ড সিস্টেম শুধু খাওয়া থেকে না, সোশালাইজিং, সেক্সুয়াল এক্টিভিটি ও ড্রাগের মাধ্যমেও শুরু হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বারবার অতিরিক্ত চালু হলে মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব পড়া শুরু হয়। বারবার খিদা লাগা, ভারসাম্য হারানো, চিনির প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে দেয়। মনোযোগ কমিয়ে দেয়, কোনো কিছু গুছানোর ক্ষমতা হারায়, অল্পতেই ক্লান্ত অনুভূত হয়, বিরক্তি, রাগ ও আগ্রাসী ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ায়।
⚫ আল্ট্রা প্রসেসড খাবার সাধারণত প্রসেসড কার্বোহাইড্রেটের মিশ্রণ যেটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সাধারণ চিনিতে পরিণত হয় যা একসাথে অনেক গুলো ক্যান্ডি একবারে খাওয়ার সমান। একবারে এত চিনি আমাদের শরীরে প্রবেশ করার ফলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা হঠাৎ করে খুব বেড়ে যায় যা আমাদের মস্তিষ্কের সাধারণ কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটায়।
⚫ আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের নিউট্রিশনাল ভ্যালু একদমই বা নেই বললেই চলে তাই এ ধরনের খাবার খাওয়ার একটু পরেই আবার খুদা লাগে। বারবার খাওয়ার কারণে স্থুলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
⚫ এসব খাবারের ফলে বিভিন্ন প্রদাহী অণু রক্তের মাধ্যমে অন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে চলে আসে ফলে আলঝেইমার ও পারকিনসন ও মস্তিষ্কের নানা রকম রোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
⚫ স্ট্রেসে আমাদের দেহে করটিসল হরমোন বেড়ে যায়। আল্ট্রা প্রসেসড খাবার এ করটিসল হরমোন বৃদ্ধি করে যা মস্তিষ্কের সামনের অংশ অর্থাৎ ফ্রন্টাল লোবে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলাফল স্মৃতিবিভ্রম ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
⚫ নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যক্রমে বিরুপ প্রভাব ফেলে ফলে মন খারাপ, ক্লান্তি ইত্যাদি অনুভুত হয়।
কিভাবে বুঝবেন খাবার আল্ট্রা প্রসেসড কিনা?
কোনো খাবার আল্ট্রা প্রসেসড কিনা তা খাবারের প্যাকেটের গায়ের লেবেলে লিখা উপাদানের লম্বা তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে। তালিকায় যদি এমন উপকরণ থাকে যা আমরা সাধারণত রান্নাঘরে ব্যবহার করি না বা সহজে মুদি দোকান গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় না তাহলে খাবারটি আল্ট্রা প্রসেসড খাবার বলে ধরে নেয়া যায়।
আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের তালিকা
সকল প্রকার ইন্সটেন্ট খাবার, চিপস, চকলেট, বার্গারের বান, কেক, বেকারি আইটেম, সসেজ, সোডা বা কোল্ড ড্রিংকস, পেস্ট্রি। মাংশ ও পনিরের পরিবর্তে উদ্ভিদজ যে প্রোটিন বাজারে রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে প্রচার করা হলেও বাস্তবে তা আল্ট্রা প্রসেসড খাবার।
আল্ট্রা প্রসেসড খাবার কিভাবে বাদ দিবেন
আপনাকে যদি পুরো একদিন হাতের মুঠোফোনটি ছাড়া থাকতে বলি, থাকতে পারবেন কি? বেশিরভাগ মানুষের উত্তর হবে ‘না’। মুঠোফোন ছাড়া যেমন চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি আমাদের প্রতিদিনের খাবারে কোন না কোন ভাবে ঢুকেই পড়ছে আল্ট্রা প্রসেসড খাবার। গ্রাম বলুন বা শহর সব অঞ্চলের মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রায় প্রতিদিন থাকে এই খাদ্যরুপী বিষ। তাই যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করা। আপনার স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন থাকতে পারে –
-সবুজ শাক, সবজি, ফল
– বাদাম, চিনি ছাড়া ড্রাইড ফ্রুটস
– বিভিন্ন রকম ডাল
– তাজা মাছ, মাংশ
– দই ( বাইরের চিনি ছাড়া)
– মশলা
এছাড়াও বাসায়ই এখন ইউটিউব দেখে সব ধরনের খাবার স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে বানানো সম্ভব। হেন রেসিপি নেই যা ইউটিউবে পাওয়া যাবে না৷ চিপস, চকলেট, কেক ইত্যাদি সবই এখন বাসায় নিজ হাতে ন্যাচারাল উপকরণ দিয়েই বানানো সম্ভব। তবে অনেকেরই মত থাকতে পারে যে রান্না বান্নার সময়টা ঠিক হয়ে ওঠে না। আপনি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজেই আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করেন না কেন, আপনার শরীরের সুস্থতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না। শরীর অসুস্থ থাকলে অর্থ, সম্পদ, কাজ কোনোটিই আপনাকে শান্তি দেবে না। আমরা কাজের ব্যস্ততায় ভুলেই যাই যে আমাদের শরীরিক সুস্থতা কতটা প্রয়োজন। অতএব শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা বাজার থেকে হোমমেড বা সময় করে নিজ হাতে চমৎকার সব রান্না করে রাখতে পারি। যারা কর্মজীবী তারা সপ্তাহের অন্তত একটি দিন সময় করে বেশি করে রান্না করে রাখতে পারেন, এতে সারা সপ্তাহের জন্য আর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না বা বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে আসবে।
শিশুদের উপর প্রভাব
বাচ্চা কাদছে, রাগ করছে, জিদ করছে কিন্তু সময় নিয়ে বাচ্চাকে থামাতে বিরক্ত লাগছে চকলেট বা চিপস দিয়ে দুই সেকেন্ডেই থামিয়ে দি। বর্তমানে খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে সহজ সমাধান খোঁজা বাবা- মা দের জন্য এখন আল্ট্রা প্রসেসড খাবার তড়িৎ উপায়। ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমানে পুষ্টিযুক্ত খাবার, কিন্তু সে বয়সে তারা খাচ্ছে আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের মত বিষাক্ত খাবার যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। বর্তামানে বাচ্চাদের মধ্যে এডিএইচডি( ADHD) রোগের প্রবণতা খুব বেশি। যার অন্যতম কারণ আল্ট্রা প্রসেসড খাবার। চিপস, চকলেট, বিস্কুট, পাউরুটি, কেক ইত্যাদি খাবারের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমানে চিনি, লবণ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল। বাচ্চাদের শরীরে এসব খাবার তৎক্ষনাৎ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধা পায়, কথা বলতে দেরি হয়, নানা রকম আচরণ গত সমস্যা দেখা দেয়। এসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত চিনি শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়ে তাদের শিখার ক্ষমতা হ্রাস করে। চাইল্ডহুড অবেসিটি বা বাচ্চাদের স্থুলতা বর্তমানে আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। আল্ট্রা প্রসেসড খাবারের কারণে অল্প বয়সেই শিশুরা স্থুলকায় হয়ে যাচ্ছে যা ভবিষ্যতে তাদের অল্প বয়সেই নানা রকম রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়বেটিস, স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি নানা রকম রোগের ঝুঁকিতে ফেলছে।
আপনার আয়ু কি কমিয়ে দিচ্ছে আল্ট্রা প্রসেসড খাবার?
২০১৯ সালে স্পেনের ১৯,৮৯৯ জন গ্র্যাজুয়েটের উপর স্টাডি করে দেখা যায় যে আল্ট্রা প্রসেসড খাবার ও অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক পাওয়া যায়। অংশগ্রহণকারীদের আল্ট্রা প্রসেসড খাবার নেয়ার পরিমাণের ভিত্তিতে গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপ দুই বেলা আল্ট্রা প্রসেসড খাবার খেয়েছিল এবং আরেকটি গ্রুপ চার বেলা আল্ট্রা প্রসেসড খাবার খেয়েছিল। দুটি গ্রুপের মধ্যে যে গ্রুপটি বেশি বেলা আল্ট্রা প্রসেসড খাবার খেয়েছিল তাদের ৬২% গড়ে ১০.৪ বছরের মধ্যে মারা গিয়েছে, যারা কম বেলা খেয়েছিল তাদের থেকে।