আফগানিস্তান-পাকিস্তান তুমুল দ্বন্দ্ব: নেপথ্যে কি? 

ভাইয়ের শত্রু ভাই, মাছের শত্রু ছাই।  কথাটা পাকিস্তানের জন্য ফলছে বটে। নতুন বছরটা পাকিস্তান শুরু করতে যাচ্ছে এক সময়ের ভ্রাতৃসম সম্পর্কের দেশ আফগানিস্তানের সাথে লড়াইয়ের উৎকন্ঠা নিয়ে। ২০২৪ সালের শেষটা একের পর এক আক্রমণের হেডলাইনের জর্জরিত ছিল পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকাগুলো৷ ২০২৫ এ কি এই সংঘাত বাড়বে? না সমঝোতায় আসতে পারে দুইপক্ষ? কেন শুরু হল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার তুমুল দ্বন্দ্ব? 

তেহরিক এ তালেবান পাকিস্তান

আফগানিস্তানের তালেবানের কথা তো সকলেই শুনেছেন, কিন্তু পাকিস্তানী তালেবান সেটা আবার কোত্থেকে?  আফগানিস্তানের তালেবান ১৯৯৪ সাল থেকে দেশটিতে শাসন করছিল। ২০০১ সালে আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে জঙ্গী  হামলা হওয়ার পর আমেরিকা আফগানিস্তানে সরাসরি আক্রমণ করে। ফলে আফগানিস্তানের কিছু সংখ্যক মানুষ দেশটি থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এই সীমান্তে নানান জাতি একত্রে বসবাস শুরু করে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল পশতুন জাতি। ছোট ছোট জাতিগুলি নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ২০০৭ সালে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান গঠন করে। যা পরবর্তীতে পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত হয়। এই সংগঠনের পূর্বের নেতাদের আমেরিকা ড্রোন এট্যাকের মাধ্যমে হত্যা করে। বর্তমানে এই দলটির প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদ। টিটিপির বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সব মিলিয়ে ৬০ হাজারেরও বেশি সৈন্য আছে বলে ধারণা করা হয়। ঝামেলা বাধে যখন পশতুন জাতি গরিষ্ঠ দল তেহরিক এ তালেবান আন্তর্জাতিক ডুরান্ড লাইনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং এই লাইন যে পশতুন জাতিকে বিভক্ত করেছে তা আবার একত্রিত করে একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করে। তারা ঘোষণা করে উত্তর পাকিস্তানে তারা নিজেদের স্বাধীন ভূমি চায়। এই অংশকে তারা পাকিস্তানের অংশ বলে মনেই করে না। তারা এর মধ্যেই নিজস্ব সরকার ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তৈরি করে উত্তর পাকিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। 

ডুরান্ড লাইন

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বিভক্তকারী রেখাকে বলা হয় ডুরান্ড লাইন। এটি সে অঞ্চলের পশতুন জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে। ১৮৯৩ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আফগানিস্তানের তৎকালীন শাসক আব্দুর রহমান খানের সঙ্গে এক চুক্তি সই করে।ওই চুক্তিতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার বর্তমান বিভক্তরেখা নির্ধারণ করা হয় যার নাম হয় ডুরান্ড লাইন। কিন্তু ওই চুক্তির কোনো সময়সীমা ছিল না বলে এই লাইনটি এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার স্থায়ী সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। পাকিস্তান এটিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তে পরিণত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলেও দৃশ্যত আফগানিস্তানের পক্ষে এই উদ্যোগ মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

১৯৪৭ সালের পর ডুরান্ড লাইনের উত্তরাধিকারী পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির বর্তমান ৪ টি প্রদেশের ২ টিই সে লাভ করেছে ডুরান্ড লাইনের সৌজন্যে। অর্থাৎ পাকিস্তানের সিন্ধু এবং পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে আফগানিস্তানের কোনো দাবি না থাকলেও বেলুচিস্তান এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে এখনো নিজেদের অংশ মনে করে আফগানিস্তান!

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান তার স্বাধীনতা লাভের সময় জাতিসংঘে একমাত্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয় আফগানিস্তানের নিকট থেকে! ডুরাল্ড লাইনকে সীমানা মেনে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে আফগানরা। সেই সৃষ্টি থেকেই আফগানিস্তান এই সীমানাটির বিরুদ্ধে ছিল ও মানতে চায় নি এবং পাকিস্তান সবসময় চেয়েছে সীমানাটি পাকাপোক্ত করতে।

২০১৬ সালে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চল ও পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের মরুভূমি বরাবর সীমান্তে বসতে থাকে কাঁটাতার ও লোহার বেড়া। বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক ‘সীমান্ত পারাপারের স্থান’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর বদলে সীমান্ত দিয়ে চলাচলের জন্য ১৬টি স্থানে আনুষ্ঠানিক তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। যদিও বিশাল ওই দুর্গম সীমান্তের পুরোটাজুড়ে বেড়া তৈরির কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এই ডুরান্ড লাইন ঘিরে চলছে উত্তেজনা। পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক যথাযথ সুবিধা ও মর্যাদা না পাওয়ায় বহু বছর ধরেই ক্ষিপ্ত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জনগণ।  প্রায়ই বেলুচিস্তান ও খাইবার- পাখতুন এলাকায় গড়ে ওঠে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, আন্দোলন।  

তালেবান ও পাকিস্তান

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে চাওয়ার সূত্র ধরে আমেরিকা আক্রমণ করে বসে আফগানিস্তানকে। আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে অবৈধ ঘাটি গেড়ে বসেছিল তখন আফগানিস্তানের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় পাকিস্তান। পরবর্তীতে আফগানিস্তানে ইউএসএসাআরকে হটাতে আমেরিকা পাকিস্তানকে ফান্ডিং দেয়ার মাধ্যমে তৈরি করে তালিবান। তালিবান যোদ্ধা দিয়ে তখন ইউএসএসআর এবং ভারতের কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করত যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। তালিবান সৃষ্টির শুরুটা তাই পাকিস্তান থেকেই। পাকিস্তান নিজেই যুদ্ধ বিধস্ত মানুষের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে এই দল। তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর সহ আরও অনেকেই পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। পাকিস্তান তাই তালেবানদের কাছে নিজেদের একটি অংশের মতই। তবে ২০ বছরের টানা যুদ্ধে তালেবানের সাথে পাকিস্তানের সরকারের চলেছে নানা টানা পোড়েন। ২০২১ সালে আফগানিস্তান বিজয়ের পর থেকে তালেবান সশস্ত্র গোষ্ঠী থেকে পরিপূর্ণ সরকার হয়ে গড়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। নির্ভরতা কমাতে চেষ্টা করে পাকিস্তানের উপর থেকে।  

আফগানিস্তান বিজয় এবং পাকিস্তান 

২০২১ সালে তালিবানদের আফগানিস্তান বিজয়ের পরে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। তখনকার প্রেসিডেন্ট ইমরান খান আফগানিস্তানের এই বিজয়কে দীর্ঘদিনের দাসত্ব থেকে মুক্তির সাথে তুলনাও করেছিলেন।  

এই সুখ বেশি দিন সইল না পাকিস্তানের।  আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ের পর তাদের খুব কাছের সহচর পাকিস্তানি তালেবান পাকিস্তানে খুব বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে।২০২৩ সালে  প্রায় ৬০% আক্রমণ বেড়ে যায় তাদের। ৭৮৯ টা আক্রমণের রিপোর্ট রয়েছে টিটিপি এর বিরুদ্ধে । এই আক্রমণে প্রায় ১৫০০ জন মারা যায় যার বেশির ভাগই দেশের পুলিশ বা নিরাপত্তা রক্ষী। সীমান্তের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দুটি দেশ হল খাইবার-পাখতুন ও বেলুচিস্তান। ইসলামাবাদ কাবুলকে টিটিপিকে সাহায্য করতে নিষেধ করলে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে দেশের সরকারের মতই জবাব দেয় তোমার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার তোমরা সামলাও। কিন্তু ঠিকই টিটিপিকে অস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে আসছে আফগানিস্তান। 

আক্রমণ

২০২৪ সালের ২১ ডিসেম্বর টিটিপি পাকিস্তান সীমান্তের একটি চেকপোস্টে হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানের ১৬ সেনা সদস্য নিহত হয়। এর প্রতিশোধে ২৪ ডিসেম্বরে টিটিপির আক্রোশে পাকিস্তান হামলা করে বসে সরাসরি আফগানিস্তানের মাটিতে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পাকতিকা প্রদেশের একটি পাহাড়ি এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তান বলছে তারা সশস্ত্র বাহিনীকে লক্ষ করে হামলাটি করেছে কিন্তু আফগানিস্তানের মতে এই হামলায় ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলের ৪৬ জন উদ্বাস্তু নিহত হয়েছে যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু৷ এতে আফগানিস্তানের সরকার ক্ষিপ্ত হয় এবং এর প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। পাকিস্তানের বিমান হামলার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক পরিস্থিতি প্রতি মূহুর্তে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। 

আফগানিস্তানের ভূমিকা 

পাকিস্তানের সরকার আফগানিস্তানের প্রধান চীফ হাইবাতুল্লাহ আখুন্ডজাদাকে বারবার অনুরোধ করে যেন টিটিপিকে পাকিস্তানে আক্রমণ করা থেকে বিরত করার ব্যাপারে সাহায্য করে। কারণ টিটিপিকে মূলত আফগানিস্তানই আশ্রয় এবং প্রশিক্ষণ অস্ত্র দেয়। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে আমেরিকার দখলদারত্বের অবসান ঘটানোতে টিটিপি বিশ্বস্ত সহচারীর মত পাশে ছিল। তাই টিটিপিকে বাধা দিয়ে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করতে চাচ্ছে না আফগান সরকার। তাই পাকিস্তান সরকারকে বললেন যেন তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিজেরাই সামলে নেয়। 

অন্যদিকে টিটিপি ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাটি। এছাড়াও বিগত বছর পেশাওয়ারের একটি মসজিদে টিটিপি বোমা বিস্ফোরণ করে।  এতে পুলিশ ও সাধারণ জনগণসহ প্রায় ১০০ জন মানুষ মারা যায়। আফগান তালেবান খবরটি শুনে জানিয়েছেন পবিত্র জায়গায় হামলা একদমই গ্রহণযোগ্য না। তবুও থামানো যায় নি পাকিস্তানি তালেবানকে। 

প্রকৃতপক্ষে এই জায়গায় আফগানিস্তানের ভয় হচ্ছে টিটিপিকে যদি বেশি চাপ প্রয়োগ করা হয় তবে তা আফগানিস্তানে অবস্থিত আইএস শাখা যার নাম আইএস খোরাসান এর সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। আইএস খোরাসান প্রতিনিয়ত আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে। টিটিপি এর সাথে যুক্ত হলে বেকায়দায় পড়তে হবে তালেবানদের। তাই টিটিপির সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখা জরুরি তালেবান সরকারের। অন্যদিকে প্রতিবেশী ও দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না তালেবান। কিন্তু এখন তালেবানদের সামনে কুমির পেছনে বাঘ এমন অবস্থা। বেছে নিতে হবে যে কোন এক পক্ষ হয় টিটিপি নয়তো পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের ভয়

১. গণতান্ত্রিক সরকার হটানোতে পাকিস্তানের মানুষ প্রথম থেকেই সেনাবাহিনীর উপর ক্ষ্যাপা। তেহরিক এ তালেবানের হামলা ঠেকাতে না পারলে মানুষ সেনাবাহিনীর উপর থেকে আস্থা হারাবে। বিপুল জনরোষের শিকার হবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। 

২.পাকিস্তানের ৪৪% অংশ হল বালুচিস্তান।এই জায়গাতে বিএলএ, মাজিদ ব্রিগ্রেড এর মত সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ গুলো একটিভ আছে। তেহরিক এ তালেবানকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে যে কোনো সময় এই গ্রুপগুলোও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। 

৩. আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবার সময় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রেখে যায় আফগানিস্তানের মাটিতেই৷ ঠিক সেই আমেরিকান অস্ত্রগুলোই ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে টিটিপিকে। যেমন M16 মেশিনগান, M4 এসল্ট রাইফেল, রাতের অন্ধকারে দেখার গগলস ইত্যাদি যা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

কোন পক্ষ কি চায়

পাকিস্তানি তালেবান চায় তাদের দলের যে সকল সদস্যকে ধরে কারাগারে নেয়া হয়েছে তাদের দ্রুতই মুক্ত করে দেয়া হোক অপরদিকে পাকিস্তান সরকার চায় এই কারামুকক্তির বদলে পাকিস্তানি তালেবান অর্থাৎ তেহেরিক এ তালেবান পাকিস্তান অর্থাৎ টিটিপি পুরো সংঘটি বিলুপ্ত হয়ে যাক। জিটিপির যাওয়া হল তাদেরকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অংশে অংশ দিয়ে দিতে হবে নিজেদের মত গঠন করতে চায় এবং স্বাধীনতা চায়। শর্তগুলো এমনই যে দুই পক্ষের জন্যই শর্তগুলো মেনে নেওয়া দুষ্কর।  ফলে কোনভাবেই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। 

কেন পাকিস্তানকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসছে না? 

২০২১ সাল থেকে টিটিপির ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তান অতিষ্ঠ হয়ে যখন ঘোষণা দিল প্রয়োজনে তারা আফগানিস্তানের মাটিতে ঘাটি গেড়ে থাকা টিটিপিকে উৎখাত করবে।  ঠিক তার পরের সপ্তাহেই চীন আফগানিস্তানের সাথে ৫৪০ মিলিয়ন ডলারের তেল-গ্যাস চুক্তি করে যা নির্মাণ হবে আফগানিস্তানের আমু দারিয়ায়। আবার চীন পাকিস্তানেও বিশাল প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে রেখেছে। পাকিস্তানের গুয়াদার পোর্টে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের চায়না পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর সিপেক (CPEC) গড়ে তুলছে চীন। যা ভবিষ্যতের চায়না বেল্ট ও রোডের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  চীন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বেড়াজালে ঢুকে তাই কোনো সম্পর্কই নষ্ট করতে চায় না। 

অন্যদিকে দীর্ঘ ২০ বছর যুদ্ধের পর গত ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট আফগানিস্তানের সাথে দোহা চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসে আমেরিকা। আফগানিস্তান যুদ্ধে আমেরিকার আর্থিক বলেন আর সামরিক প্রচুর লোকসান হয় কিন্তু ফলাফল প্রায় শূন্যের কোঠায়।  তাই আমেরিকা আরেক দফা আফগান ঝামেলায় জড়াতে চাবে না এটাই স্বাভাবিক।  

যুদ্ধ জটিলতা 

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দুই দেশের জন্যই এখন যুদ্ধের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে। আফগানিস্তান দীর্ঘদিন আমেরিকার দখলদারত্বের থেকে মুক্ত হয়ে মাত্র নিজেদের দেশকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ভাবে সাবলম্বী করার চেষ্টা চালায় যাচ্ছে৷  অন্যদিকে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকার ইমরান খানকে সরিয়ে ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নিয়েছে সেনাবাহিনী। এ নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজমান।  অর্থনৈতিক ভাবে টালমাটাল দেশটি। যুদ্ধে জড়িয়ে পরার মত পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই দেশটির সামনে।  এর উপর চিরশত্রু দেশ ভারত সর্বদাই পাকিস্তানের ভুল পদক্ষেপের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ, চীন, মালদ্বীপ, মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে টালমাটাল অবস্থা ভারতের।  তাই আফগানিস্তানের সাথে স্বার্থ রক্ষার্থে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে ভারত। যা পাকিস্তানের মাথা ব্যাথার আরেকটি কারণ । দুই দেশের জন্যই ব্যাপক লস প্রজেক্ট এই যুদ্ধে কি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান জড়াবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top